আজ ১৪ ডিসেম্বর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের ৫১তম শাহাদতবার্ষিকী । দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র দুই দিন আগে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জে সম্মুখযুদ্ধে তিনি শহীদ হন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ যে সাতজন বীরকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান ‘বীর শ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয় তিনি তাঁদের অন্যতম। তাঁর সম্মানে ঢাকা সেনানিবাসের প্রধান ফটকের নাম ‘শহীদ জাহাঙ্গীর গেট’ নামকরণ করা হয়েছে।
মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ১৯৪৯ সালের ৭ মার্চ বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার রহিমগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আব্দুল মোতালেব হাওলাদার ছিলেন কৃষক এবং মা সাফিয়া বেগম ছিলেন গৃহিণী। মহিউদ্দিনরা তিন বোন তিন ভাই। পাতারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯৫৩ সালে তার শিক্ষাজীবনের সূচনা হয়। মুলাদি মাহমুদ জান পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৪ সালে বিজ্ঞান বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৬৬ তে তিনি বরিশাল বিএম (ব্রজমোহন) কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে অধ্যয়নরত অবস্থায়ই পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৮’র ২ জুন তিনি ইঞ্জিনিয়ার্স কোরে কমিশন লাভ করেন।
ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সোনামসজিদ এলাকাসহ বিভিন্ন রণাঙ্গনে অসাধারণ সাফল্যের কারণে তাঁকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মুক্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। মহানন্দা নদীর তীরে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে শত্রু সেনাদের প্রতিরক্ষা লাইন একের পর এক ভেঙে তিনি এগোতে থাকেন। জয় যখন সুনিশ্চিত, ঠিক তখনই শত্রুর বাংকারে চার্জ করার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর। ওই দিনই পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে গেলে মুক্ত হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ। পরের দিন ১৫ ডিসেম্বর শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের মৃতদেহ ঐতিহাসিক সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে আনা হয়। অসংখ্য স্বাধীনতা প্রেমিক জনগণ, ভক্ত মুক্তিযোদ্ধা, অগণিত মা-বোনের নয়ন জলের আশীর্বাদে সিক্ত করে তাকে এখানে সমাহিত করা হয়।
তথ্যসূত্র: দেশ রূপান্তর
Leave a Reply